/ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বার্ষিকী উপলক্ষে রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আহতদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা /ফোকাস বাংলা
২৪খবরবিডি: 'বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় বিভিন্ন গোষ্ঠী সরকারকে চাপ দিচ্ছে বলে ইঙ্গিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, যারা আমাদের নেতাদের হত্যা করেছে, অগ্নিসন্ত্রাস করে যারা মানুষ খুন করেছে, যারা ১৫ আগস্টের পক্ষে ছিল, যারা ২১ আগস্টের ঘটনায় মদদ দিয়েছে; হত্যা, খুন করাই তো ওদের চরিত্র।'
তাদের সঙ্গে বসতে হবে? তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে? তাদের খাতির করতে হবে? তাদের নির্বাচনে আনতে হবে? এত আহ্লাদ কেন, আমি তো বুঝি না। বাংলাদেশে কি আর মানুষ নেই। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। কেউ যদি নির্বাচন করে করবে! আর তারা নির্বাচন করবে কীভাবে? যে দলের নেতাই নেই, সাজাপ্রাপ্ত অথবা পলাতক। তারা নির্বাচন করবে কী, আর কীভাবে ভোট পাবে? ভোট কাকে দেখে দেবে- এটাই প্রশ্ন। গতকাল রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। আবারও ১৫ আগস্টের মতো আঘাত আসার আশঙ্কা ব্যক্ত করে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আঘাত আরও আসবে, জানি। এই আঘাত হয়তো আরও সামনে আসবে। কারণ যখন বঙ্গবন্ধু দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই তো ১৫ আগস্ট ঘটেছে। নির্বাচন এলেই বিএনপি ষড়যন্ত্র শুরু করে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিএনপি বিদেশিদের কাছে কান্নাকাটি করে এবং তারা এসে অনুরোধ করে- কোনোরকমে তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কিনা! জায়গা দেবে কি দেবে না- সেটা বলবে বাংলাদেশের জনগণ। দেশ আবারও কি সন্ত্রাসের যুগে ফেরত যাবে, নাকি চলমান উন্নয়নের ধারায় থাকবে, সেই সিদ্ধান্তও জনগণকেই নিতে হবে।
-তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে, উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাধীনতার চেতনায় জয়বাংলা ফিরে এসেছে। এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না, তারা বসে থাকবে না। তারা আঘাত করবে। বাংলাদেশকে আবারও জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করবে। সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। '২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের ইন্ধন ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া প্রকাশ্যে এ ধরনের নৃশংস গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটতে পারে না।' যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়- তাদের '৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনসহ জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সময় অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রহসনের নির্বাচনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা জিয়া নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত করেছিলেন। গ্যাস বিক্রি করতে রাজি হননি বলে সুশীল সমাজ ও প্রভাবশালী একটি দেশের ষড়যন্ত্রে ২০০১-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে দেওয়া হয়নি- এমন অভিযোগ পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, আমেরিকান কোম্পানি গ্যাস নিতে চেয়েছিল, সেটাতে আমি সমর্থন করিনি। কিন্তু খালেদা জিয়া গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসেন। নানা ষড়যন্ত্র করে আমাদের হারিয়ে দেওয়া হলো।'
এর আগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ২১ আগস্টের শহীদদের স্মরণে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে দলীর সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের পক্ষে আরেকবার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাঁর সঙ্গে ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত ২১ আগস্টের শহীদদের পরিবারের সদস্য ও আহতদের সান্ত্বনা দেন। শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং দোয়া ও মোনাজাত শেষে শুরু হয় আলোচনা সভা। '২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, খালেদা জিয়ার ওই সময়ের বক্তৃতাগুলো অনুসরণ করবেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আগে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, 'শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধী দলের নেতাও কোনোদিন হতে পারবেন না। এগুলোর তো রেকর্ড আছে। এই বক্তৃতা তিনি আগাম দিলেন কীভাবে! তার মানে, আমাকে হত্যা করবে। এই পরিকল্পনা তারা নিয়ে ফেলেছে।' একই সঙ্গে ওই গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদ ও ডালিমের জড়িত থাকার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় কর্নেল রশিদ ও ডালিম বাংলাদেশে ছিল এই চক্রান্তের সঙ্গে। তারা যে সে সময় ঢাকায় ছিল, সেটা অনেকেই জানে। তাদের আত্মীয়স্বজন আছে, খোঁজ নিলে জানতে পারবেন।
গ্রেনেড হামলার পর আমার রক্তাক্ত শরীর দেখে প্রথমে তারা ভেবেছে অপারেশন সাকসেসফুল, আমি বেঁচে নেই। কিন্তু যখনই জেনেছে আমি মরিনি, বেঁচে আছি; তখনই রাতে তারা ভেগে গেছে। খালেদা জিয়া তাদের যেভাবে হোক দেশ থেকে চলে যেতে সাহায্য করেন। আর এদের কে এনেছিল?
এত আহদ্মাদ কেন, 'খুনিদের নির্বাচনে আনতে হবে'
বিএনপি সরকার না আনলে তারা এলো, আবার চলেও গেল! বক্তব্যের শুরুতে ভয়াল ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতেই বিএনপি-জামায়াত তথা চারদলীয় জোট সরকার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে গ্রেনেড হামলা চালায়। তারা গণতন্ত্রের কথা বলে, এটা কিসের গণতন্ত্র? একটা প্রকাশ্য জনসভায় কীভাবে গ্রেনেড মারতে পারে?' ২১ আগস্টের ঘটনার বিচার না করে তৎকালীন সরকারের সব আলামত নষ্ট করার অপচেষ্টার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি।
সরকারপ্রধান বলেন, 'উন্নয়ন করে দেশকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত করতে পেরেছি। হয়তো এটাই ছিল বড় অপরাধ! ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত অত্যন্ত সফলভাবে দেশ চালিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করেছিলাম। সেজন্যই তো ২১ আগস্টের ঘটনা ঘটিয়ে আমাকে শেষ করার একটা পরিকল্পনা ছিল। গ্রেনেড, বোমা, বুলেট দিয়ে বারবার আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। আল্লাহর রহমতে নেতাকর্মীরা আমাকে বাঁচিয়েছেন।' অগ্নিসন্ত্রাস আর হত্যা-খুন করা বিএনপির চরিত্র বলে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিশোধের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। এই যে কষ্ট নিয়ে মানুষ বেঁচে আছেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বারবার আঘাতের শিকার হচ্ছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে এসে রিভেঞ্জ নিতে যায়নি। আমরা তো ওদের ঘরবাড়ি দখল করতে যাইনি। হাতুড়ি দিয়েও পিটিয়ে মারিনি। কারাগারেও রাখিনি। যে মামলাগুলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হয়েছিল, কেবল সে মামলাগুলোই চলছে। আর অগ্নিসন্ত্রাস করে যারা মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। একেকজন খুনখারাবি করে এদেশ থেকে পালিয়েছে।
'করোনা সংকট ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবিলায় তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। একই সঙ্গে উৎপাদন বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি চাই না দেশের মানুষ কষ্ট পাক। আজ ২১ আগস্ট আমাদের যেন নতুন জন্ম হয়েছে, সেদিন আমরা যারা ওই সমাবেশ ও র্যালিতে ছিলাম। কাজেই আমাদের দায়িত্ব জনগণের প্রতি। যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে সেই দায়িত্ব পালন করে যাব। সেটাই হচ্ছে আজকের প্রতিজ্ঞা। এজন্য সকলের সহযোগিতাও দরকার। শুধু সমালোচনার কথা বললে হবে না। সকলকে কাজও করতে হবে। যাতে এই ধাক্কা থেকে আমাদের দেশের মানুষ রেহাই পায়।' আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সঞ্চালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি।